খাঁটি মধু চেনার সহজ কিছু উপায়
খাঁটি মধু চেনার সহজ কিছু উপায় নিয়ে আজকের পােষ্ট । আমরা জানি মধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মধু কতটা দরকারী । মধুর উপকারীতা এবং কার্যকারীতা বলে শেষ করবার মত নয় । তবে মধু যদি আসল না হয়ে ভেজাল যুক্ত হয় , কিংবা নকল মধু হয় , তখন কিন্তু হিতে বিপরিত হতে পারে । আর সম্পূর্ণা যেহেতু তার পাঠকদের কথা চিন্তা করে , তাই আজকে আমরা আপনাদের সামনে সহজ কিছু মধু পরিক্ষার টিপস নিয়ে হাজির হচ্ছি ।
১. পানি পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে আপনাকে এক গ্লাস পানির মধ্যে মাত্র এক চামচ মধু মিশাতে হবে । এক চামচ মধু নিয়ে এক গ্লাস পানির মধ্যে আস্তে আস্তে নাড়ুন । যদি দেখেন মধু পানির সাথে মিশে যাচ্ছে , তাহলে বুঝতে হবে এই মধুটি আসল মধু না । আর যদি মধু আসলই হয়ে থাকে , তাহলে মধু পানিতে মিশে যাবে না , বরং ছােট ছােট দলা আকারে পানির মধ্যে ছড়িয়ে যাবে । তবে এই পদ্ধতিতে আসল মধুর সাথে কিছুটা ভেজাল মেশালে তা সহজে বােঝা যাবে না ।
২. পিপড়া পদ্ধতিঃ
পিপড়া মিষ্টি জিনিষ পছন্দ করলেও মধু পছন্দ করে । এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে , তবে আমরা সেদিক যাবাে না । এক টুকরা কাগজে কিছু মধু লাগিয়ে যেখানে পিপড়া আছে সেখানে রেখে দিন । যদি পিপড়ারা এই কাগজের দিকে আকৃষ্ট হয় , এবং এটিকে ঘিরে ধরে , তাহলেই বুঝতে হবে এই মধূ আসল মধু না ! আর যদি পিপড়ারা পাত্তাই না দেয় , আপনিই বুঝবেন যে এটা আসলেই আসল মধু ।
৩. কাপড়ে দাগ পদ্ধতিঃ
এ পদ্ধতিতে পরিক্ষার জন্য প্রথমেই এমন এক টুকরা সাদা কাপড় নিন যেটি আপনি সব হয়ত আর পরবার কাজে ব্যবহার করবেন না । এবার কাপড়ে সামান্য মধু সরাসরি লাগিয়ে রাখুন । শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন । যদি পানিতে ধুয়ে ফেললে দাগ চলে যায় , তাহলে বুঝবেন এটি আসল । নকল মধু / ভেজাল মেশানাে মধুতে থাকা জিনিষ আপনার কাপড়ে দাগ ফেলবে , যা আসল মধু করে না ।
৪. ডিপ ফ্রিজ পদ্ধতিঃ
মধু একটি কিছুতে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে একদিন রেখে দিন । একদিন পর মধু বের করে দেখুন , যদি আসল মধু হয় , তাহলে এটির সামান্য তম অংশও জমবে না । যদি পুরােটা জমে যায় কিংবা কিছু অংশ জমে কিংবা নিজের অংশ জমে আসছে এমন হয় , তাহলে বুঝবেন যে এটিতে ভেজাল আছে । আসল মধু ঠান্ডায় জমে যায় না ।
৫. অগ্নি পরিক্ষাঃ
এ পরিক্ষার জন্য আপনাকে এক টুকরা কটন বার নিতে হবে । কটন বার কি জিনিষ ? কান পরিস্কার করার জন্য যে কটন ব্যবহার করা হয় সেটা, এর এক প্রান্তে একটু মধু লাগিয়ে নিন । এবার এখানে সাবধানতার সাথে আগুন ধরিয়ে দিন । এখান থেকে তিনটি ফলাফল আসবে।
ক . আগুন জ্বলবে নাঃ
আগুন না জ্বললে বুঝবেন যে মধুটি পুরাটাই নকল এবং এতে প্রচুর পরিমানে পানি আছে । ফলে আগুন জ্বলছে না ।
খ . আগুন জ্বলবে , কিন্তু পটপট শব্দ হবেঃ এতে বুঝবেন যে মধুটি আসলই , শুধু ভিতরে পানি মেশানাে আছে আরকি । শব্দ যত বেশী , পানি তত বেশী ।
গ . আগুন জ্বলবে কিন্তু শব্দ হবে নাঃ আমার মনে হচ্ছে আর বলে দিতে হবে না, যে এমনটা হলে আপনি নিযে বুঝবেন এই মধু খাটি মধু , এবং সম্পূর্ন্য ভেজাল মুক্ত মধু ।
৬. মেথিলেটেড স্পিরিট পদ্ধতিঃ
এর জন্য প্রথমেই আপনাকে যে কোন সাইন্স ইকুইপমেন্ট স্টোর থেকে মেথিলেটেড স্পিরিট কিনে আনতে হবে । পরিক্ষাটি সতর্কভাবে করবেন এবং হাত দিয়ে সরাসরি ধরবেন না । সমান পরিমানে মেথিলেটেড স্পিরিট এবং মধু নিতে হবে এবং নাড়তে থাকতে হবে । যদি দেখেন মধু তলানী হিসাবে জমা হচ্ছে , তাহলে বুঝবেন মধু আসল । আর যদি স্পিরিটের রং সাদাটে হয়ে আসে , তাহলে বুঝবেন মধুটি নকল ।
৭. ব্লটিং পেপার পদ্ধতিঃ
এই পরিক্ষার জন্যও আপনাকে কোন সাইন্স স্টোর থেকে ব্লটিং পেপার কিনে আনতে হবে । ব্লটিং পেপারের উপরে কয়েক ফোঁটা মধু নিন । যদি মধু ব্লটিং পেপারের ভিতরে আস্তে আস্তে ঢুকে যায় বা মিশে যায় , বুঝবেন এটি আসল মধু নয় । কারণ আসল মধু ব্লটিং পেপারকে ভেজায় না ।
৮. চোখ পদ্ধতিঃ
প্রথমেই বলে নিচ্ছি , এটি না করাই ভালাে । চোখের মধ্যে এক ফোঁটা খাঁটি মধু নিলে চোখ প্রথমে জ্বালাপােড়া , এর পর চোখ থেকে পানি পড়বে এবং সর্ব শেষে চোখের মধ্যে ঠান্ডা অনুভূতি হবে । আর যদি খাঁটি মধু না হয় , তাহলে এমনটি হবে না । তবে হ্যাঁ ভেজাল হিসাবে এমন কিছু যদি দেওয়া হয় যা চোখের জ্বালা - পােড়ার কারণ , তাহলে শুধু জ্বালা - পােড়া এবং পানিই বের হবে ; কিন্তু চোখের মধ্যে ঠান্ডা অনুভূতি হবে না । শেষে আবারও অনুরােধ করবাে এই পরিক্ষাটি না করবার জন্য ।
ছােট - বড় , সুস্থ্য - অসুস্থ্য সবার জন্য মধু উপকারী । কিন্তু আসল মধু পাওয়া খুবই দুস্কর । তাই মধু পরীক্ষার পদ্ধতি জানা জরুরী । আর আমরা আশাকরি আজকের এই টিপস গুলি আপনাকে সেই কাজেই সহায়তা করবে ।
0 Comments